সিন্ধু সভ্যতাকে নগর সভ্যতা বলা হয় কেন-সাধারণ জ্ঞান
সিন্ধু সভ্যতা
সিন্ধু সভ্যতা অর্থ সিন্ধু নদের তীরবর্তী অঞ্চলের অতি প্রাচীন সভ্যতা যার ধ্বংসাবশেষ হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে আবিষ্কৃত হয়েছে। সিন্ধু সভ্যতা একটি ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা। কিন্তু প্রস্তর বা প্রাচীন যুগ থেকেই এই সভ্যতার বিকাশ লাভ করে। সিন্ধু সভ্যতা কোথায় গড়ে উঠেছিল বা সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল সম্মন্ধে ঐতিহাসিকদের ধারণা, ব্রোঞ্জযুগীয় সভ্যতার এই নিদর্শন আনুমানিক ৩৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে আনুমানিক ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সিন্ধু নদ অঞ্চলে গড়ে উঠেছিলো। সিন্ধু সভ্যতার ভৌগলিক অবস্থান এর বিষয়ে জানা যায় প্রথম দিকে এই সভ্যতা পাঞ্জাব অঞ্চলের সিন্ধু নদের তীর ও পরে তা ঘগ্গর-হকরা নদী উপত্যকাসহ গঙ্গা-যমুনা নদী অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। বর্তমান মানচিত্রে সিন্ধু সভ্যতার অবস্থান পাকিস্তান, ভারতের পশ্চিম দিকের রাজ্যগুলি, দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তান এবং বেলুচিস্তান প্রদেশের পূর্ব অংশ সিন্ধু সভ্যতার অন্তর্গত ছিলো। সিন্ধু সভ্যতার নগর হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো অন্যতম। এছাড়া রয়েছে চানহুদারো, সুতকাজেনডোর, লোথাল, কালিবঙ্গাল ইত্যাদি।
সিন্ধু সভ্যতার অপর নাম কি?
- হিন্দু সভ্যতা
- হরপ্পা সভ্যতা
- মিসরীয় সভ্যতা
- পারস্য সভ্যতা
সিন্ধু সভ্যতার কেন্দ্রস্থল কোথায় অবস্থিত?
- সিন্ধু নদ
- ব্রহ্মপুত্র নদ
- পদ্মা নদী
- গঙ্গা নদী
সিন্ধু সভ্যতা কোন নদীর তীরে অবস্থিত?
- গঙ্গা
- কালিন্দী
- সিন্ধু
- যমুনা
সিন্ধু সভ্যতা কে আবিষ্কার করেন?
- রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়
- জন মার্শাল
- দয়ারাম সাহানী
- মর্টিমার হুইলার
ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু সভ্যতা
সিন্ধু-সরস্বতী-হাকরা ইত্যাদি নদ-নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু সভ্যতা হলো ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরোনো সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার কেন্দ্রস্থল ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সিন্ধু নদ। এ কারণে সিন্ধু নদের নাম অনুসারে এই সভ্যতার নামকরণ করা সিন্ধু সভ্যতা হয়েছিল। সিন্ধু সভ্যতার অপর নাম হরপ্পা সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার প্রথম আবিষ্কৃত প্রত্নক্ষেত্রের নাম হরপ্পা। এ কারণে সিন্ধু সভ্যতাকে হরপ্পা সভ্যতা বলা হয়। সিন্ধু সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা দ্রাবিড়গণ। ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু সভ্যতা গড়ে ওঠে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে এবং ১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু সভ্যতার পতন হয় । তারপর এই সভ্যতাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। সিন্ধু সভ্যতা পতনের কারণ বা সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন, বন্যা, নদীপথের গতি পরিবর্তন ইত্যাদি। সিন্ধু সভ্যতায় মূর্তি পাওয়া গেছে বেশকিছু সংখ্যক যেগুলো পোড়ামাটি, চুনাপাথর ও ব্রোঞ্জের তৈরি । সিন্ধু সভ্যতার সিলমোহর ছিলো। সিলমোহরে স্বস্তিকা চিহ্ন, দেবদেবীর মূর্তি, পশুপাখির ছবি ইত্যাদি খোদাই করা থাকতো। সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহার জানতো । সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কৃত হয় ১৯২২ সালে। বাঙালী প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কার করেন। সিন্ধু সভ্যতার পতন হয় ২৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। সিন্ধু সভ্যতার জনগণের সিন্ধু সভ্যতার রাজনৈতিক অবস্থা ও শাসনপ্রণালি সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।
সিন্ধু সভ্যতার আর্থ সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণ
সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিলো আয়কর ও কৃষি নির্ভর। সিন্ধু সভ্যতার একটি প্রধান আয়কর হিসাবে তাঁদের কৃষি উদ্যোগগুলি ছিল। তাঁরা ধান, গম, মুগ ইত্যাদি ফসল চাষ করতেন। সিন্ধু নদ ছিলো সিন্ধু সভ্যতার প্রাকৃতিক সম্পদ। এছাড়াও, সিন্ধু সভ্যতায় মুদ্রা প্রচলন এবং বাণিজ্য প্রচলন ছিলো। সিন্ধু সভ্যতার লোকজনরা বিভিন্ন সামাজিক পরিষেবামূলক কাজ করতেন। তাঁদের সামাজিক কাজগুলোর মধ্যে ন্যায় বিচার ও অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রমগুলি ছিলো। সিন্ধু সভ্যতার রাজনৈতিক অবস্থা মধ্যে সিন্ধু সভ্যতার শাসন পদ্ধতি অন্যতম। তাঁরা লিপির মাধ্যমে লেখাপড়া করতো। তাঁরা গ্রামসমূহকে একত্র করে একটি নিবন্ধন সিস্টেম ব্যবহার করতেন এবং শহরগুলি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। তাঁদের শাসন পদ্ধতির একটি সুবিধা ছিল ন্যায্যতা এবং তারপরই তাঁরা মূল্যবান বিচার ব্যবস্থা পরিচালনা করেছিলেন। সিন্ধু সভ্যতার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গুলির মধ্যে সংস্কৃতি এবং শিল্পকলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তাঁরা উন্নয়নশীল নগরগুলি গঠন করেছিলেন এবং তাঁরা সুন্দর দেওয়াল আচ্ছাদন, শিল্প ও শিল্পকলা, সুন্দর মুদ্রাকৃতি ইত্যাদি তৈরি করতেন। সিন্ধু সভ্যতার সামাজিক ও আর্থনৈতিক বিকাশ স্পষ্টভাবে দেখা যায়। তাঁদের আধুনিক সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা ছিলো। সিন্ধু সভ্যতার বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। ভারতে এবং ভারতের বাইরে বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে হরপ্পা সভ্যতার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য চলত। হরপ্পা সভ্যতায় কর্ণাটক থেকে সােনা, রাজস্থান ও বেলুচিস্তান থেকে তামা, পূর্ব ও দক্ষিণ ভারত থেকে সিসা এবং রাজস্থান ও গুজরাট থেকে দামি পাথর আমদানি করা হত।
নগর সভ্যতা কাকে বলে?
নগরকেন্দ্রিক সভ্যতাগুলোকে নগর সভ্যতা বলে। অস্ট্রেলিয়ার আর্কিওলোজিস্ট গর্ডন চাইল্ডের মতে যে সকল সভ্যতার মাঝে নগর সভ্যতা অনেক জনসংখ্যা ও ঘনবসতিপূর্ণ হতে হবে। যার মধ্যে থাকবে কারিগর ও পেশাজীবী মানুষ, নির্মান ও স্থাপত্য থাকবে, থাকবে শাসক শ্রেণি, খাজনা দেবার ব্যবস্থা, লিখন পদ্ধতি, জ্ঞান বিজ্ঞান ও শিল্প চর্চা সহ শিল্প প্রতিষ্ঠান। ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য যে সভ্যতার মাঝে দেখা যায় তাকে নগর সভ্যতা বলে।
সিন্ধু সভ্যতাকে নগর সভ্যতা বলা হয় কেন
আমাদের সবার মনেই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় যে এতা পুরাতন সিন্ধু সভ্যতা কে নগর সভ্যতা বলা হয় কেন? সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা দেখলে সহজেই উন্নত নগর পরিকল্পনার সাথে সিন্ধু সভ্যতার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। উন্নত নগর পরিকল্পনার সাথে সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বৈসাদৃশ্য নেই বললেই হয়। অধিকিন্তু সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনার সাদৃশ্য গুলো যদি আমরা দেখি সিন্ধু সভ্যতায় নগরের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিলো রাস্তা, রাস্তার পাশে ডাস্টবিন, সড়ক বাতি , পানি নেমে যাওয়ার জন্য ড্রেন, রাস্তার পাশে একল-দোতলা পরিকল্পিত বাড়ি। প্রত্যেক বাড়িতে পানির জন্য ছিলো কুয়া, বাড়ির ছোট ড্রেন দিয়ে বাড়ির ময়লা চলে যেত রাস্তার বড় ড্রেনে। ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলো থেকে জানা যায় মহেঞ্জাদারো নগরে পাওয়া গেছে বিশাল গোসলখানা যা বর্তমান নগর সভ্যতার সুইমিং পুলের মতো। হরপ্পাতে পাওয়া গেছে বিশাল শষ্যাগার। এসব হতে বোঝা যায় সিন্ধু সভ্যতার লোকজনরা উন্নয়নশীল নগরগুলি গড়ে তুলেছিলেন এবং তাদের জীবনযাত্রার বেশিরভাগ শহরের ভিতরে ব্যবহার করা হত। এছাড়াও, সিন্ধু সভ্যতার লোকজনরা নগরে প্রবেশ করার সাথে সাথে তাদের সামাজিক ও আর্থিক জীবনযাত্রা ও উন্নয়ন একটি নগর মধ্যে উন্নয়ন লাভ করে। তাই সিন্ধু সভ্যতাকে নগর সভ্যতা বা নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা বলা হয়।
আজকের আলোচনায় আমরা সিন্ধু সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতার আর্থ সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণ, ভারতীয় উপমহাদেশের সিন্ধু সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনার সাদৃশ্য, সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বৈসাদৃশ্য, সিন্ধু সভ্যতাকে নগর সভ্যতা বলা হয় কেন? সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি? সিন্ধু সভ্যতা কোথায় গড়ে উঠেছিল? সিন্ধু সভ্যতার অপর নাম কি? সিন্ধু সভ্যতা অর্থ, সিন্ধু সভ্যতার সিলমোহর, সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কারক কে? উন্নত নগর পরিকল্পনার সাথে সিন্ধু সভ্যতার সাদৃশ্য, সিন্ধু সভ্যতা কোন নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল? সিন্ধু সভ্যতা কখন গড়ে উঠেছিল ইত্যাদি সকল বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।