বিভাজ্যতা কাকে বলে-বিভাজ্যতার নিয়ম
চাকরির প্রস্তুতি বা প্রতিযোগীতামূলক যেকোনো পরীক্ষাতে ভালো করতে হলে বিভাজ্যতার সূত্র জানা প্রয়োজন। আমাদের দৈনন্দিন হিসাব-নিকাশে বিভাজ্যতার নিয়ম বা বিভাজ্যতার সূত্র ব্যবহার করে খুব সহজেই ভাগ করতে পারি। যত বড় সংখ্যায় হোক বিভাজ্যতার নিয়ম বা বিভাজ্যতার সূত্র জানা থাকলে আমরা বলে দিতে পারি ঐ সংখ্যাটি অন্য কোন কোন ছোট সংখ্যা দ্বার বিভাজ্য হবে। আজকের আলোচনায় বিভাজ্যতা কাকে বলে? ১ হতে ২০ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম, বিভাজ্যতার সূত্র আলোচনা করব।
{tocify} Stitle={Custom Title}
বিভাজ্যতা কাকে বলে
বিভাজ্যতা বলতে বুঝায় একটি সংখ্যা অপর একটি সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে ভাগ হওয়া।সহজভাবে বলা যায়, একটি পূর্ণ সংখ্যাকে অন্য একটি পূর্ণ সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যদি ভাগফলটি একটি পূর্ণ সংখ্যা হয় এবং ভাগশেষ শূন্য হয় তবে প্রথম সংখ্যাটি দ্বিতীয় সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। উদাহরণস্বরূপ, ২১ সংখ্যাটি ৩ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। কেননা, ২১ কে ৩ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল ৭ হয় এবং ভাগশেষ থাকে না।
বিভাজ্য কাকে বলে
কোনো একটি পূর্ণসংখ্যাকে অন্য একটি পূর্ণসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যদি ভাগশেষ না থাকে, তখন প্রথম সংখ্যাটিকে (ভাজ্য) দ্বিতীয় সংখ্যা (ভাজক) দ্বারা বিভাজ্য বলে। যেমন: ৮ ÷ ৪ = ২; এখানে- ৮ সংখ্যাটি, ৪ দ্বারা বিভাজ্য।
বিভাজ্য সংখ্যা কাকে বলে
যে সংখ্যাকে ভাগ করা হয় তাকে বিভাজ্য সংখ্যা বলে। ভাগ অংকের ক্ষেত্রে কোনো সংখ্যা অপর কোনো সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হলে, ১ম সংখ্যাটিকেই বিভাজ্য সংখ্যা বলে।
বিভাজ্যতার সূত্র
১ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
১ দ্বারা বিভাজ্যতার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। যেকোনো পূর্ণ সংখ্যা ১ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: ৪২ সংখ্যাটি ১ দ্বারা বিভাজ্য।
২ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
সকল জোড় সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য। অর্থাৎ যেসব সংখ্যার একক স্থানীয় অঙ্কে ০, ২, ৪, ৬ অথবা ৮ থাকে সেসব সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা। যেমন:- ১২০, ২০৪, ৩৮৬ ইত্যাদি।
৩ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল সংখ্যার অঙ্কগুলোর সমষ্টি বা যোগফল ৩ দ্বারা বিভাজ্য হলে, সে সকল সংখ্যা ৩ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা। যেমন:- ৫৩১ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল = ৫ + ৩ + ১ = ৯। এখানে, ৯ সংখ্যাটি ৩ দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং, ৫৩১ সংখ্যাটিও ৩ দ্বারা বিভাজ্য।
প্রথমবার প্রদত্ত সংখ্যার যোগফল যদি আবার একটা বড় সংখ্যা হয়, তবে প্রাপ্ত যোগফলটিকে আবার একই নিয়মে প্রয়োগ করে দেখতে হবে তা ৩ দ্বারা বিভাজ্য হয় কিনা। এভাবে প্রয়োগ করতেই থাকতে হবে। যেমন, ৯৯২৮৫৮৭৩৮৪৯৯ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল ৮১। আবার ৮১ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর যোগফল ৯। এখন ৯ সংখ্যাটি যেহেতু ৩ দ্বারা বিভাজ্য, সুতরাং ৯৯২৮৫৮৭৩৮৪৯৯ সংখ্যাটিও ৩ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা।
৪ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল সংখ্যার এককের ও দশকের অঙ্ক দুইটি মিলে তৈরি হয় সংখ্যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য হয়, সে সকল সংখ্যা ৪ দ্বার বিভাজ্য সংখ্যা। যেমন:- ১৯৩১২ সংখ্যাটির এককের ও দশকের অঙ্ক দুইটি মিলে ১২ হয়, যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং ১৯৩১২ সংখ্যাটিও ৪ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা।
কোনো সংখ্যার এককের ও দশকের অঙ্ক ০ হলে অর্থাৎ, সংখ্যার শেষে ০০ (দুটি শূন্য) থাকলেও উক্ত সংখ্যাটিও ৪ দ্বারা বিভাজ্য।
৫ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল সংখ্যার এককের অঙ্কে ০ বা ৫ থাকে সে সকল সংখ্যা ৫ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা। যেমন:- ২০৫, ৫২০ ইত্যাদি।
৬ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল সংখ্যা একই সাথে ২ এবং ৩ দ্বারা বিভাজ্য হয় সে সকল সংখ্যা ৬ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা। যেমন:- ৪৮, ৫৪ ইত্যাদি।
৩ দ্বারা বিভাজ্য সকল জোড় সংখ্যাই ৬ দ্বারা বিভাজ্য।
৭ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
কোনো সংখ্যার এককের স্থানের অঙ্কটিকে ২ দিয়ে গুণ করে, গুণফলকে এককের সংখ্যা বাদে গঠিত সংখ্যা থেকে বিয়োগ করলে বিয়োগফল যদি ৭ দ্বারা বিভাজ্য হয় তবে ঐ সংখ্যাটিও ৭ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন ৫৬৭-এর ক্ষেত্রে, ৫৬ – (৭ × ২) = ৫৬ – ১৪= ৪২। এখানে ৪২ সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য। অতএব, ৫৬৭ সংখ্যাটিও ৭ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
বড়ো সংখ্যার ক্ষেত্রে একই নিয়মের পুনঃ প্রয়োগ করতে হবে। যেমন,
২৩৪৫০-এর ক্ষেত্রে, ২৩৪৫ – (০ × ২) = ২৩৪৫ - ০ = ২৩৪৫
২৩৪৫-এর ক্ষেত্রে, ২৩৪ – (৫ × ২) = ২৩৪ - ১০ = ২২৪
২২৪ -এর ক্ষেত্রে, ২২ – (৪ × ২) = ২২ - ৮ = ১৪
১৪ সংখ্যাটি ৭ দ্বারা বিভাজ্য হওয়ায়, ২৩৪৫০ -সংখ্যাটিও ৭ দ্বারা বিভাজ্য।
অধিকতর বড় সংখ্যার ক্ষেত্রে এককের স্থানের অঙ্কটিকে ২ দিয়ে গুণ করার পরিবর্তে ৯ দিয়ে গুণ করে একই নিয়মে যাচাই করতে হবে।
৮ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল সংখ্যার শেষ তিনটি অঙ্ক দ্বারা গঠিত সংখ্যা ৮ দ্বারা বিভাজ্য হয়, সে সকল সংখ্যা ৮ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন, ১২৩২৮ সংখ্যার শেষ তিনটি অঙ্কের দ্বারা গঠিত সংখ্যা হলো ৩২৮। এখানে, ৩২৮ সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভাজ্য, সুতরাং ১২৩২৮ সংখ্যাটিও ৮ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা।
কোনো সংখ্যার শেষে/সর্বডানে ০০০ (তিনটি শূন্য) থাকলে উক্ত সংখ্যাটি ৮ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন, ১০০০, ২০০০ ইত্যাদি।
৯ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
কোনো সংখ্যার অঙ্কগুলোর সমষ্টি যোগফল যদি ৯ দ্বারা বিভাজ্য হয়, তবে ঐ সংখ্যাটিও ৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
প্রথমবার প্রদত্ত সংখ্যার যোগফল যদি আবার একটা বড় সংখ্যা হয়, তবে প্রাপ্ত যোগফলটিকে আবার একই নিয়মে প্রয়োগ করে দেখতে হবে। [ ৩ এর নিয়ম দেখুন]
১০ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যদি কোনো সংখ্যার একক স্থানীয় অঙ্কটি ০ (শূন্য) হয় তবে সংখ্যাটি ১০ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন:- ৩০, ৫০০ ইত্যাদি।
১১ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যেকোনো সংখ্যার একক বাদে গঠিত (দশক, শতক, হাজার মিলে) সংখ্যার থেকে তার এককের স্থানের অংক বিয়োগ করতে করতে যদি বিয়োগফল ১১ দ্বারা বিভাজ্য হয় তবে সংখ্যাটি ১১ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন:- ৬২৫৪৬ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে;
৬২৫৪ - ৬ = ৬২৪৮
৬২৪ - ৮ = ৬১৬
৬১ - ৬ = ৫৫, যা এগারো দ্বারা বিভাজ্য। অতএব, ৬২৫৪৬ সংখ্যাটি ১১ দ্বারা বিভাজ্য।
১২ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল জোড় সংখ্যা একইসাথে ৩ এবং ৪ দ্বারা বিভাজ্য, সে সকল জোড় সংখ্যা ১২ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন:- ১৫৬ সংখ্যাটি একটি জোড় সংখ্যা এবং একইসাথে ৩ ও ৪ দ্বারা বিভাজ্য। অতএব, ১৫৬ সংখ্যাটি ১২ দ্বারা বিভাজ্য।
১৩ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
কোনো সংখ্যার এককের অংকের সাথে ৯ গুণ করে গুণফলকে একক বাদে গঠিত ( দশক, শতক, হাজার মিলে ) সংখ্যার সাথে যোগ করলে, যোগফল যদি ১৩ দ্বারা ভাগ যায় তবে সংখ্যাটি ১৩ দ্বারা
বিভাজ্য। যেমন:- ৭৬৪৪ এর ক্ষেত্রে
৬৪ - ( ৪ × ৯ ) = ৭২৮
৭২ - ( ৮ × ৯ ) = ০, যা ১৩ দ্বারা বিভাজ্য। অতএব, ৭৬৪৪ সংখ্যাটি ১৩ দ্বারা বিভাজ্য।
১৪ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল জোড় সংখ্যা ৭ দ্বারা বিভাজ্য হয় সে সকল জোড় সংখ্যা ১৪ দ্বারা বিভাজ্য হবে। যেমন:- ৪৫, ৬০ ইত্যাদি।
১৫ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল সংখ্যা একই সাথে ৩ এবং ৫ দ্বারা বিভাজ্য হয় সে সকল সংখ্যা ৬ দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যা। যেমন:- ৪৫, ৬০ ইত্যাদি।
১৬ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যদি কোনো সংখ্যার শেষ ৪ টি অংক মিলে গঠিত সংখ্যা ১৬ দ্বারা বিভাজ্য হয় তাহলে সংখ্যাটি ১৬ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন:- ৩৭১২।
১৭ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
কোনো সংখ্যার এককের অংকের সাথে ৫ গুণ করে গুণফলকে একক বাদে গঠিত (দশক, শতক, হাজার মিলে) সংখ্যার সাথে যোগ করলে, যোগফল যদি ১৭ দ্বারা ভাগ যায় তবে সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন:- ৯৩৮৪ এর ক্ষেত্রে
৯৩৮ - ( ৪ × ৫ ) = ৯১৮
৯১ - ( ৮ × ৫ ) = ৫১, যা ১৭ দ্বারা বিভাজ্য। অতএব, ৯৩৮৪ সংখ্যাটি ১৭ দ্বারা বিভাজ্য।
১৮ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল জোড় সংখ্যা ৯ দ্বারা বিভাজ্য সে সকল জোড় সংখ্যা ১৮ দ্বারা বিভাজ্য হবে।
১৯ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
কোনো সংখ্যার এককের অংকের সাথে ২ গুণ করে গুণফলকে একক বাদে গঠিত (দশক, শতক, হাজার মিলে) সংখ্যার সাথে যোগ করলে, যোগফল যদি ১৯ দ্বারা ভাগ যায় তবে সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন:- ১৮৩৪৬৪ এর ক্ষেত্রে
১৮৩৪৬ + ( ৪ × ২ ) = ১৮৩৫৪
১৮৩৫ + ( ৪ × ২ ) = ১৮৪৩
১৮৪ + (৩ × ২ ) = ১৯০১৯+ ( ০ × ২ ) = ১৯ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। অতএব, ১৮৩৪৬৪ সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
২০ দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম
যে সকল সংখ্যার দশকে জোড় সংখ্যা ও এককে ০ থাকে সে সংখ্যাগুলো ২০ দ্বারা বিভাজ্য। যেমন: ১৮০।
আজকের আলোচনায় বিভাজ্যতা কাকে বলে, অবিভাজ্য অর্থ, সংখ্যার বিভাজ্যতা, বিভাজ্যতার নিয়ম, বিভাজ্যতার সূত্র। একটি সংখ্যা অন্য সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা যাবে কি না তা সহজে বোঝার জন্য যে সকল বিভাজ্যতার সূত্র জানতে হয় তা ১- ২০ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট ও শেয়ার করে পাশে থাকুন। ধন্যবাদ।