সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র
জ্যামিতি বা ত্রিকোণমিতি পাঠে সমকোণী ত্রিভুজ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি পাঠ্য। বিখ্যাত গণিতবিদ পিথাগোরাসের উপপাদ্য, টলেমির উপপাদ্য সহ অসংখ্য উপপাদ্য রয়েছে সমকোণী ত্রিভুজের উপর ভিত্তি করে। এছাড়া ত্রিকোণমিতির মানগুলো ও আমরা সমকোণী ত্রিভুজের উপর ভিত্তি করে পাই। তাই আজকের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ এই সমকোণী ত্রিভুজক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করবো যেখানে আলোচনার শেষে জানা যাবে সমকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে? সমকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য কী কী? সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র কী? সমকোণী ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র কোথায় অবস্থিত? ইত্যাদি। সমকোণী ত্রিভুজের পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। তো চলুন শেষ পর্যন্ত পড়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র শেষে আমরা সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকার অংক সমাধান করে দিয়েছি।
{tocify} Stitle={Custom Title}
সমকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে?
প্রথমেই জেনে নিই সমকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে। আমরা জানি, একটি ত্রিভুজের তিনটি কোণ থাকে। ত্রিভুজের এই তিনটি কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ আব ১৮০ ডিগ্রি। এখন, যদি কোনো ত্রিভুজের এই তিনটি কোণের মধ্যে যে কোনো একটি কোণের পরিমান ৯০ ডিগ্রি হয় তখন ঐ ত্রিভুজকে সমকোণী ত্রিভুজ বলা হয়। অর্থাৎ, যে ত্রিভুজের একটি কোণ সমকোণ তাকে সমকোণী ত্রিভুজ বলে।
সমকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য
একটি ত্রিভুজের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো সব বৈশিষ্ট্য তো সমকোণী ত্রিভুজের মধ্যে রয়েছে। যেমন:
- সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি কোণ আছে।
- সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি বাহু আছে।
- সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রি।
- সমকোণী ত্রিভুজের যে কোনো দুই বাহুর সমষ্টি তৃতীয় বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর।
এছাড়া সমকোণী ত্রিভুজের নির্দিষ্ট যে বৈশিষ্ট্য আছে তা নিম্নরূপঃ
- সমকোণী ত্রিভুজের যে কোনো একটি কোন সমকোণ।
- সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণের বিপরীত বাহুকে অতিভুজ বলে।
- সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ ভিন্ন অপর দুই বাহু ভূমি ও লম্ব।
- সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের দৈর্ঘ্যের বর্গ অপর দুই বাহুর দৈর্ঘ্যের বর্গের সমষ্টির সমান যা পিথাগোরাসের উপপাদ্য।
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র হলো সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ সংলগ্ন দুই বাহুর দৈর্ঘ্যের গুণফলের অর্ধেক। অর্থাৎ, আমরা সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ ভিন্ন অপর দুই বাহুকে যদি ভূমি ও উচ্চতা ধরি তাহলে সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র হলো: ১/২ × ভূমি × উচ্চতা। এখন, সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র প্রয়োগ করে কিছু অংক সমাধান দেখি।
একটি সমকোণী ত্রিভুজের সমকোণ সংলগ্ন বাহু দুইটি যথাক্রমে ৪ সে.মি. ও ৩ সে.মি হলে এর ক্ষেত্রেফল কত?
সমাধানঃ
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র হতে আমরা জানি,
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল
= সমকোণ সংলগ্ন দুই বাহুর দৈর্ঘ্যের গুণফলের অর্ধেক
= ১/২ × ৪ × ৩ বর্গ সে. মি.
= ১/২ × ১২ বর্গ সে. মি.
= ৬ বর্গ সে. মি.
যদি কোনো একটি সমকোণী ত্রিভুজের ভূমি ১২ সে.মি. ও উচ্চতা ১৬ সে.মি হয় তবে এর ক্ষেত্রেফল কত?
সমাধানঃ
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র হতে আমরা জানি,
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল
= ১/২ × ভূমি × উচ্চতা
= ১/২ × ১২ × ১৬ বর্গ সে. মি.
= ১/২ × ১৯২ বর্গ সে. মি.
= ৯৬ বর্গ সে. মি.
সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি বাহু পূর্ণসংখ্যায় যথাক্রমে ৩, ৪, ৫ এর গুণিতক। অর্থাৎ, সমকোণী ত্রিভুজের ১ম বাহু বা ভূমি/লম্ব ৩ হলে দ্বিতীয় বাহু বা ভূমি/লম্ব ৪ এবং তৃতীয় বাহু বা অতিভুজ ৫। এমনি করে
ভূমি/লম্ব ভূমি/লম্ব অতিভুজ
৩× ২ = ৬ ৪× ২ = ৮ ৫× ২ = ১০
৩× ৩ = ৯ ৪× ৩ = ১২ ৫× ৩ = ১৫
৩× ৪ = ১২ ৪× ৪ = ১৬ ৫× ৪ = ২০ {alertSuccess}
একটি সমকোণী ত্রিভুজের লম্ব ৫ মিটার এবং ভূমি ১২ মিটার হলে, এর ক্ষেত্রফল কত?
সমাধানঃ
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র আমরা জানি,
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল
= ১/২ × ভূমি × লম্ব।
= ১/২ × ১২ × ৫ বর্গ মি.
= ১/২ × ৬০ বর্গ মি.
= ৩০ বর্গ মি.
একটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ ১৫ মিটার এবং ভূমি ১২ মিটার হলে, এর ক্ষেত্রফল কত বর্গমিটার?
সমাধানঃ
পিথাগোরাসের উপপাদ্য অনুসারে সমকোণী ত্রিভুজের লম্ব = √(অতিভুজ^২ - ভূমি^২)
= √(১৫^২ - ১২^২)
= √(২২৫ - ১৪৪)
= √(৮১)
= ৯
এখন, সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র হতে আমরা জানি,
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল
= ১/২ × ভূমি × লম্ব।
= ১/২ × ১২ × ৯ বর্গ মি.
= ১/২ × ৬০ বর্গ মি.
= ৫৪ বর্গ মি.
কোনো সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ যদি ১০ সেমি. এবং লম্ব ৮ সেমি. হলে, এর ক্ষেত্রফল নির্ণয় করো?
সমাধানঃ
পিথাগোরাসের উপপাদ্য অনুসারে সমকোণী ত্রিভুজের ভূমি= √(অতিভুজ^২ - লম্ব^২)
= √(১০^২ - ৮^২)
= √(১০০- ৬৪)
= √(৩৬)
= ৬
এখন, সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র হতে আমরা জানি,
সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল
= ১/২ × ভূমি × লম্ব।
= ১/২ × ৬× ৮ বর্গ সেমি.
= ১/২ × ৪৮ বর্গ সেমি.
= ২৪ বর্গ সেমি.
সমকোণী ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
যেকোনো ত্রিভুজের তিনটি বাহুর যদি লম্ব-সমদ্বিখন্ডক আঁকা হয় তবে তা সমবিন্দু হয়। যে বিন্দুটি ঐ ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র।সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে এই পরিকেন্দ্র অতিভুজের উপর হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিভুজের মধ্যবিন্দুই পরিকেন্দ্র হয়। সমকোণী ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজে অবস্থিত।
তাহলে আজকের আলোচনায় সমকোণী ত্রিভুজ বিষয়ে সমকোণী ত্রিভুজ কাকে বলে? সমকোণী ত্রিভুজের বৈশিষ্ট্য, সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফলের সূত্র, সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন অঙ্কের সমাধান ও সর্বশেষ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সমকোণী ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র কোথায় অবস্থিত জানলাম। সমকোণী ত্রিভুজ বিষয়ক আর কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্টে জানান। ভালো লাগলে, শেয়ার করে পাশে থাকুন।